Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আলু ফসলের উন্নত জাত ও উৎপাদন কলাকৌশল

আলু বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফসল। উৎপাদনের দিক থেকে ধান, গম ও ভুট্টার পরেই চতুর্থ স্থানে আছে আলু। বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। বাংলাদেশের সর্বত্রই এর চাষ হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়া ও বাজারজাতকরণের জন্য কিছু জেলায় এর চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে।


বাংলাদেশে আলু সাধারণত সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বিভিন্ন তরকারির সাথে খেতে খুবই মুখরোচক। প্রক্রিয়াজাত আলু বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আলু একটি স্টার্চ প্রধান খাদ্য এবং ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। পৃথিবীর অন্তত ৪০টি দেশে আলু মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য। আলু একটি স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল ফসল যা জমির স্বল্পতাহেতু বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।


বর্তমানে বাংলাদেশ আলু হেক্টরপ্রতি গড় ফলন মাত্র ১১ টন। আলুর উৎপাদন ২০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ফলন বাড়লে উৎপাদন খরচ কমে আসবে। ভাতের বদলে আলু খেলে চালের ওপর বাড়তি চাপ কমে আসবে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভাতের বদলে যদি আলু মাঝে মাঝে খাওয়া হতো তাহলে চালের ওপর নির্ভরতা অনেক কমে যেত।


আলুর জাত নির্বাচন
ভালো জাতের আলুর চাষ করলে একদিকে চাষি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে আবার অন্যদিকে ফলনও  আশানুরূপ পাওয়া যায়। তাই জাত নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশে যেসব জাতের আলুর চাষ হয়ে থাকে তা হলো দেশি জাত এবং উচ্চফলনশীল উন্নত জাত। বর্তমানে আলু চাষের মোট জমির শতকরা ৬৫ ভাগ জমিতে উন্নত জাতের আলু এবং ৩৫ ভাগ জমিতে দেশি জাতের আলুর চাষ হয়ে থাকে।


দেশি জাত
ফলন কম হলেও দেশি জাতের বৈশিষ্ট্য হলো দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। দেশি জাতের আলু ছোট ও ওজন  ৫ থেকে ৪৮ গ্রাম। কিছু দেশি জাত আছে যা উন্নত জাতের চেয়ে নাবি। দেশি জাতের আলু তুলনামূলকভাবে খেতে খুব সুস্বাদু। বর্তমানে বাজারমূল্যে উন্নত জাতের চেয়ে দেশি জাতের আলু বেশি দামে বিক্রি হয়। দেশি জাতসমূহের মধ্যে আউশা, চল্লিশা, দোহাজারী লাল, ফেইন্তাশীল, হাসরাই, লাল পাকরী, লালশীল, পাটনাই, সাদা গুটি শীল বিলাতী ও সূর্যমূখী। দেশি জাতগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। দেখা গেছে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দেশি জাতের আলুর ফলন কমে যায়। বীজের মাধ্যমেই এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে। তাই দেশি জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ করে লাগানো উচিত।


উচ্চফলনশীল
১৯৬০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যেসব উন্নত জাতের আলুর চাষ হচ্ছে তার মধ্যে হিরা, আইলসা, পেট্রোনিস, মুল্টা, ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, মন্ডিয়াল, কুফরী সিন্দুরী, চমক, ধীরা, গ্রানোলা, ক্লিওপেট্রা ও চিনেলা জাতটি সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। বারি টিপিক্রস-১ এবং বারি টিপিক্রস-২ নামে ২টি হাইব্রিড জাতের আলু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু-১১ (চমক), বারি আলু-১২ (ধীরা), বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-১৫ (বিনেলা), বারি আলু-১৬ (আরিন্দা), বারি আলু-১৭ (রাজা), বারি আলু-১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে) এবং বারি আলু-২০ (জারলা) জাত রয়েছে। এসব জাত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত। এগুলো সবই উচ্চফলনশীল জাত।


উৎপাদন পদ্ধতি
বাংলাদেশের কৃষক আলু উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু এগুলো বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করলে একদিকে যেমন কৃষক লাভবান হবে অন্যদিকে ফলনও বাড়বে।


মাটি নির্বাচন
আলু চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।


উৎপাদন মৌসুম
বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর মাসের আগে আলু লাগানো যায় না, কারণ তার আগে জমি তৈরি সম্ভব হয় না। নভেম্বরের পরে আলু লাগালে ফলন কমে যায়। এ জন্য উত্তরাঞ্চলে মধ্য-কার্তিক (নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ), দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ)।


বীজের হার
প্রতি হেক্টরে ১.৫ টন। রোপণের দূরত্ব ৬০x২৫ সে. মি. (আস্ত আলু) এবং ৪৫x১৫ সে. মি. (কাটা আলু)। কৃষকেরা ঘরে সংরক্ষিত দেশি জাতের যে বীজ ব্যবহার করেন তা খুবই নিকৃষ্টমানের। কোনো কোনো সময় হিমাগারে থাকা অবস্থায় আলুর মাঝখানে কাল দাগ দেখা যায়। মাঠে থাকা অবস্থায় বা সংরক্ষণের সময় যদি উচ্চ তাপমাত্রায় (৩৫ ডিগ্রি সে. এর উপরে) থাকলে বা অক্সিজেন বিহীন অবস্থায়  থাকলে এমনটি হয়। এ রোগটিকে ব্লাকহার্ট রোগ বলে। আবার যদি হিমাগারের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সে. এর নিচে চলে যায় তাহলে আলু শীতলাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের আলু গজাবে না। তাই কৃষক অবশ্যই এদিকটা বিবেচনা করে আলু বীজ সংগ্রহ করবেন।


বীজ শোধন
যদি সম্ভব হয় আলু বীজকে মারকিউরিক ক্লোরাইড এক গ্রাম নিয়ে ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১-২ ঘণ্টা ডুবিয়ে নিলে ভালো হয়। আবার বোরিক এসিডের ০.৫% দ্রবণে আলু বীজ ১৫-৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। কাটা বীজ বা গজানো বীজ শোধন করা যাবে না।


বীজের আকার
২৫-৩৫ গ্রাম ওজনের বীজ রোপণ করা সবদিক থেকে ভালো।


সারের পরিমাণ
কৃষকেরা যদি আলুর উচ্চফলন পেতে চান তাহলে সুষম সারের বিকল্প নেই। সাধারণ কৃষকের জন্য আলু চাষে নিম্নোক্ত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
ইউরিয়া            -   ২২০-২৫০ কেজি/হেক্টর
টিএসপি            -   ১২০-১৫০ কেজি/হেক্টর
এমওপি             -  ২২০-২৫০ কেজি/হেক্টর
জিপসাম            -   ১০০-১২০ কেজি/হেক্টর
জিংক সালফেট    -   ৮-১০ কেজি/হেক্টর
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট - ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর  
(অম্লীয় বেলে মাটির জন্য)
বোরন             -   ৮-১০ কেজি/হেক্টর
গোবর             -   ৮-১০ টন/হেক্টর
জমিতে যদি সবুজ সার প্রয়োগ করা হয় তাহলে গোবরের প্রয়োজন নেই।


সার প্রয়োগ পদ্ধতি
গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক সালফেট আলু রোপণের আগেই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ৩০-৩৫ দিন পর যখন আলুর নালা তৈরি করে মাটি তোলার সময় দিতে হবে।


জলবায়ু
আলু চাষের জন্য তাপমাত্রা ও আলোর প্রভাব খুবই প্রকট, দেখা গেছে ১৫ ডিগ্রি - ২০ ডিগ্রি সে. গড় তাপমাত্রা আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার ওপরে গেলে ফলন কমতে থাকে আবার ৩০ ডিগ্রি সে. এ আলু উৎপাদন ক্ষমতা লোপ পায়। আবার ১০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার নিচে গেলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এজন্য আলু লাগানোর সময় ২০ ডিগ্রি - ২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ তাপমাত্রায় গাছ দ্রুত গজায়। আবার বাংলাদেশে দেখা গেছে যে বছর মেঘমুক্ত আকাশ ও তাপমাত্রা সঠিকভাবে থাকে সে বছর আলুর গড় ফলন ১০-১৫% বেড়ে যায়।


সেচ
আলু শীতকালীন সবজি। আর শীতকাল শুষ্ক এজন্য আলু চাষে সেচের প্রয়োজন হয়। পানির প্রাপ্যতা কম হলে আলুর ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বীজ আলু বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একবার সেচ দিতে হবে। ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ এবং ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে আরেকটি সেচ দিতে হবে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ৮-১০ দিন পর সেচ দিলে ফলন বেশি পাওয়া যায়।


পরিচর্যা
আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গোড়ায় মাটি দেয়া দরকার এবং সেই সাথে আগাছা দমন করতে হবে।


রোগ ও পোকামাকড়
রোগের প্রতিকার

আলু মাঠে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে আলুর মড়ক রোগ, আলুর আগাম রোগ যা পাতা পোড়ানো বা কুঁচকে যাওয়ার মতো দেখায়, কাণ্ড ও আলু পচা রোগ, ঢলে পড়া ও বাদামি পচন রোগ, আলুর দাঁদ রোগ, আলুর মোজাইক রোগ, আলুর শুকনো পচা রোগ, আলুর নরম পচা রোগ অন্যতম।


রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।  রোগ দেখা দিলে সেচ দেয়া বাদ রাখতে হবে এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে বালাইনাশক দিতে হবে।


পোকামাকড় দমন
আলু ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দেখা যায়। এদের মধ্যে আলুর কাটুই পোকা অন্যতম। এ পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী ৪০-৫০ মিমি লম্বা হয়। এ পোকা চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে এজন্য আলুর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাটুই পোকার প্রকোপ বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উলটপালট করে কীড়া খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়াও প্রতি লিটার পানির সাথে ডারসবান ২০ ইসি ৫ মিলি হারে  মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি ভিজিয়ে ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে। আলুর সুতলি পোকা ও আলু উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত করে। এ পোকা দেখতে ছোট, ঝালরযুক্ত, সরু ডানা বিশিষ্ট ধূসর বাদামি রঙের হয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ পোকা সাদাটে বা হাল্কা গোলাপি বর্ণের এবং ১৫-২০ মিমি লম্বা হয়। এ পোকা আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে। কৃষকের বাড়িতে রাখা আলু এ পোকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


দমন
বাড়িতে রাখা আলুতে শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ার পাতলা স্তর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যাতে পোকা আলুর সংস্পর্শে না আসে। আলু সংরক্ষণের পূর্বে সুতলী পোকায় খাওয়া আলু ফেলে দিতে হবে।


ফসল সংগ্রহ
আলু পরিণত হলে আলু গাছের কাণ্ড হেলে পড়ে এবং নিচের দিকের পাতা হলুদ হতে থাকে। আলু সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই পরিপক্বতা লাভ করার পর ফসল সংগ্রহ করতে হবে। উচ্চফলনশীল জাতে ৮০-১০০ দিন লাগে পরিপক্বতা আসতে। দেশি জাতে সময় আরো বেশি লাগে। বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল জাতের হেক্টরপ্রতি ফলন ১৩-১৪ টন এবং দেশি জাতে ৭-৮ টন। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করলে উচ্চফলনশীল জাতে ২০ টনের অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।


রেফারেন্স : সবজি বিজ্ঞান (ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ)
            বারি হাত বই।

 

কৃষিবিদ কামাল উদ্দিন আহাম্মেদ*

* বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ঈশ্বরদী, পাবনা


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon